Friday, 29 March, 2024

সর্বাধিক পঠিত

দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনতে গবেষণা


তারা বাইম মাছ

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছে নিয়মিত। তাদের ক্লান্তিহীন গবেষণা দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ খাবার টেবিলে আনতে। ইতোমধ্যে ৩১ প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদনে সফল হয়েছেন তারা। এর মধ্যে সারা দেশে চাষ হচ্ছে ১৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ। তাদের আশা দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ খুব দ্রুতই উৎপাদন হবে।

চাষিরা বিপ্লব ঘটাচ্ছেন এসব দেশীয় মাছ উৎপাদনে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, দেশে স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

আরো পড়ুন
করলার লাভজনক চাষ পদ্ধতি
লাভজনক করলা চাষ

করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে Read more

বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ

বাগদা চিংড়ির (ব্ল্যাক টাইগার) চেয়ে ভেনামির উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। তারপরও বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ ? Read more

এর মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩ প্রজাতির।

এর মধ্যে ৬৪টি বিলুপ্তপ্রায় মাছ।

ইতোমধ্যে কৃত্রিম প্রজননে ৩১টি প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা উৎপাদন করেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণা চলছে বাকিগুলোও উৎপাদন করতে।

চাষিদের মাঝে উৎপাদিত দেশীয় মাছের পোনা বিতরণ করা হচ্ছে।

বিলুপ্তপ্রায় মাছ নিয়ে হচ্ছে গবেষণা

চাষের মাধ্যমে ২০০৮-২০০৯ সালে দেশি মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার টন।
২০১৯-২০২০ সাল নাগাদ তা প্রায় চার গুণ বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন।
যার  ফলে বাজারে এখন দেশি মাছের ছড়াছড়ি।

গবেষণায় উৎপাদিত এসকল মাছ সমূহের মধ্যে পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, শিং, মাগুর, গুজি আইড়, চিতল, রাজপুঁটি, মেনি, বালাচাটা, গুতুম, বাটা, দেশি সরপুঁটি, কালবাউশ, কুঁচিয়া, গনিয়া, পিয়ালি, ঢেলা, রানি, ভাগনা, খলিশা, কই, গজার, বাতাসি ও কাকিলা।

এ ছাড়া গবেষণা চলছে বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা বাকি মাছগুলো নিয়েও।

বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ৯৩০টি মিঠাপানির হ্যাচারি রয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় মাছের পোনা সারা দেশে উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি মালিক ও চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ইনস্টিটিউটে।

স্বল্পমূল্যে উৎপাদিত পোনাগুলোও সরবরাহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জুলফিকার আলী। তিনি জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে।

এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ।

এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

সেই সাথে সহায়তা করে রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে।

বাজারে এখন মাছের দাম হাতের নাগালে এসেছে

ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাহা আলী।

তিনি বলেন, দুই বছর আগেও পাবদা মাছ ১৩০০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু এখন পাওয়া যায় ৫০০ টাকার কমেই।

বাজারে এখন শিং মাছের দাম ও ট্যাংরা মাছের দাম ৪০০ টাকা।

এসব মাছ ছাড়াও সাম্প্রতিককালে বাজারে বিপন্ন প্রজাতির মাছ বেড়েছে।

মেনি, চিতল, ফলি, কই ইত্যাদি মাছের প্রাপ্যতা বেড়েছে।

সেই সাথে সহনশীল পর্যায়ে দামও নেমে এসেছে।

দ্রুত চাষের আওতায় আনা হবে সব মাছ

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হয়ে গেছে।

এতে ইতোমধ্যে অনেক বিনষ্ট হয়েছে দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র।

প্রাকৃতিক জলাধার খাল-বিল ও নদনদীতে হ্রাস পেয়েছে এসব মাছের প্রাপ্যতা।

সেকারণে দেশীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের সদরদপ্তরে।

তিনি জানান, সারা দেশের সকল ছোট মাছ সংগ্রহ করে এই লাইভ জিন ব্যাংকে রাখা হচ্ছে।

প্রকৃতি থেকে কোনো মাছ হারিয়ে গেলে সংরক্ষণে থাকা মাছটি থেকে আবারও ওই মাছের পোনা উৎপাদন হবে।

তিনি আরও জানান, বিলুপ্তপ্রায় ১৯ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছাড়া উৎপাদিত আরও ১২টি মাছের পোনা নিয়ে গবেষণা চলছে।

সেই মাছগুলোকেও দ্রুত চাষের আওতায় আনা হবে।

বর্তমানে ময়মনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা চলছে বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে।

দেশীয় মাছ সংরক্ষণ গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট  ২০২০ সালে একুশে পদক অর্জন করে।

0 comments on “দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনতে গবেষণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *